কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল,পেলেন আন্তজার্তিক পুরস্কার

কলকাতা পুলিশের সাউথ ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল অরূপ মুখার্জী বৃহস্পতিবার নাম তুললেন শারজার “ব্রেভ ইন্টার ন্যাশনাল বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে”। রাস্তায় প্রতিদিন হাজার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে। সারা মাস ট্রাফিক সামলে, মাসের শেষে বেতনের পুরো টাকাটাই চলে যায় তাঁর স্বপ্নের “পুঞ্চা নবদিশা মডেল” স্কুল চালাতে।
পুরুলিয়ায় তিনি নিজের গ্রামেই শবর ছেলে মেয়েদের জন্যে তৈরি করেছেন এই স্কুল। শত বাধা সামলেও লকডাউনেও তিনি কলকাতা থেকে ছুটে গেছেন চার হাজার শবর পরিবারের খাবারের জোগান দিতে। দীর্ঘ প্রায় এক দশকের ওপর শবরদের জন্যে করে চললেও এখনও পাননি কোনরূপ সরকারি স্বীকৃতি কিংবা সাহায্য । তবে তাঁর এই সামাজিক কাজের জন্য বারংবার তিনি বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা দ্বারা সম্মানীত হয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ মৃতদেহ সৎকারে দায়িত্বে খোদ ওসি
এখনও পর্যন্ত সর্বভারতীয়স্তরে মোট প্রায় ৬৫টি পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে “ভারতের বেস্ট সোশ্যাল পুরস্কার” , “টিচার ওয়ারিঅর পুরস্কার” , “টেলিগ্রাফ এডুকেশন পুরস্কার’ ও আরও অনেক সর্ব ভারতীয় পুরস্কার। অনেক পুরস্কারের পর অবশেষে শারজার দেওয়া “ব্রেভ ইন্টার ন্যাশনাল বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে” তাঁর নাম উঠল । যদিও অরূপ মুখার্জীর আক্ষেপ, যে এখনও পর্যন্ত নিজের দেশের সরকারের কোনও সন্মান বা পুরস্কার তাঁকে দেওয়া হয়নি।
অরূপ মুখার্জী বড় হয়েছেন পুলিশের পরিবারেই। তাঁর বাবা পঙ্কজ মুখার্জী ছিলেন পুলিশের ওসি, কাকাও ছিলেন পুলিশে। অরূপ মুখার্জী জানালেন যে ছোট্ট বেলা থেকেই তিনি শবরদের প্রতি অন্যায় ও অত্যাচার প্রতক্ষ্য করেছেন। তৎকালীন সমাজ যেন শবরদের অপরাধপ্রবন জাতির তকমা সেঁটে দিয়েছিল। তখন থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল,শবরদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনে,তাঁদের অপরাধ প্রবনজাতির তকমা মুছবেন তিনি। ২০১১ সালে পুলিশে চাকরি পাওয়ার পরেই তিনি তাঁর পুরুলিয়ার বাড়ির সামনে গড়ে তোলেন “পুঞ্চা নবদিশা মডেল স্কুল”। বর্তমানে সেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২৬ জন । প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত থাকা-খাওয়া ও পোষাক সব ফ্রি। এছাড়াও পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী অবধি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের হস্টেলে থাকা,খাওয়া ও পোশাকের ব্যবস্থ্যা তিনিই করেছেন। নিজের বেতনের টাকা ছাড়াও কিছু সহৃদয় ব্যাক্তি ও পরিবার তাঁর এই কাজে তাঁকে অর্থ সাহায্য করে আসছেন । পুরুলিয়ায় তিনি “শবর পিতা” বলেই বেশি পরিচিত। তবে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্তি তাঁর কাজের মান্যতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দিলো।