
দিনহাটা:- এ যেন বলিউডের কোন সিনেমার চুরি সিকোয়েন্সের চিত্রনাট্য| মঞ্জু সাহা ওরফে পূর্ণিমা সাহা অপরাধের কাহিনী পড়তে পড়তে আপনার এমনটাই মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে তা রিলে নয়, রিয়েল এ |ভুয়ো নাম ঠিকানা দিয়ে খুঁজে খুঁজে বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে রান্নার কাজ জোগাড় করা । কিছুদিনের মধ্যেই খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে গয়নাগাটি টাকা পয়সা সব হাতিয়ে একদিন নিঝুম রাত্রে পগার পার। ১৯৯৯ সাল থেকে আপাত নিরীহ চেহারার ওই মহিলা দুষ্কৃতী এই ভাবেই একের পর এক অপরাধ করে চলেছে – গ্যাংটক -দার্জিলিং -ধূপগুড়ি -দিনহাটা ……. পুলিশের জালে পড়ে জেল ও খেটেছে -কখনও বা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়ে আবার একই পদ্ধতিতে করেছেন পরের অপরাধ। .
২০১৪ সালে এই অপরাধের তাগিদেই দিনহাটায় চলে এসে চক্রবর্তী বাড়িতে কাজ জোগাড় করে নেন। মাত্র ৩ দিনের মধ্যেই বৃদ্ধ দম্পতিকে রাতের খাবারে কিছু মিশিয়ে দিয়ে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও গয়নাগাটি নিয়ে পগার পার। পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধা আরতি চক্রবর্তী হাসপাতালে মারা যান। বৃদ্ধ সুবোধ চক্রবর্তী যমের মুখ থেকে ফিরে আসেন। রজু হয় খুনের মামলা।
দিনহাটা পুলিশ তদন্তে নামে কিন্তু অপরাধীও গ্রেপ্তার হয়নি আর খুনের কিনারাও হয়নি। লকডাউন আবহে যখন অপরাধের সংখ্যা একটু কম তখন পুরানো ফাইলের ধুলো ঝেড়ে এই কেসটির উপর নজর যায় আই.সি.দিনহাটা শ্রী সঞ্জয় দত্তের। মোডাস অপারেন্ডি দেখে অপরাধীর প্রকৃতি তদন্ত করে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করাটাই তার নেশা । অনুমান করতে দেরি হয়নি সম্ভাব্য অপরাধীর নাম । দুঁদে অফিসার তাই নিজে থেকেই আদালতের অনুমতি নিয়ে আবার এই খুনের মামলার তদন্ত শুরু করেন। নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এবং পুরানো ফাইল — তথ্য ঘেঁটে অপরাধীর বর্তমান ঠিকানা বের করেন রায়গঞ্জ থানার চণ্ডীতলায়। ধূপগুড়ি আই. সি. থাকা কালীন এই মহিলাকে একই ধরনের অপরাধে গ্রেপ্তারও করেছিলেন। এবার তাই কোন রকম ভুল না করে রায়গঞ্জ থানার আই সি সুরাজ থাপা ও এল.এস.আই সুভদ্রা সাহার সহযোগিতায়
2রা জুলাইয়ে অপরাধীকে চণ্ডীতলার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে সোজা দিনহাটায়। এরপর অপরাধীর দোষ স্বীকার, তারপর কাঠগড়ায়। এই অপরাধীকে গ্রেপ্তারে সাহায্য করার জন্য আই. সি. রায়গঞ্জ থানার সুরাজ থাপা ,এল.এস.আই সুভদ্রা সাহা এবং আই সি সঞ্জয় দত্ত সহ উত্তর দিনাজপুর পুলিশ কে অনেক ধন্যবাদ জানান দিনহাটা সুবোধ চক্রবর্তী সহ এই কেসে ভুক্তভোগীরা |
কোচবিহার জেলা পুলিশ সাদা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে অপরাধী ও অপরাধের উপর তা সে যে কোনো ধরনেরই হোক। অপরাধীকে ধরে এনে কাঠগড়ায় তুলতে , প্রকৃত অপরাধীর সাজার ব্যবস্থা করতে কোচবিহার জেলা পুলিশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, জানালেন পুলিশ সুপার নিম্বালকার।