পুলিশের ডাইরি

পুলিশের প্রিয়তমা
একজন পুলিশের আদর্শ প্রিয়তমা হবার প্রথম শর্ত আপনাকে ‘অসীম ধৈর্যশীলা’ হতে হবে। সহ্যের সীমা বলতে কিছু নেই এটাই হতে হবে আপনার জীবনদর্শন।
যদি আপনি সহ্যের সীমা ধরে বসে থাকেন তাহলেই বিপদ। কিভাবে? ধরুন আপনি সারাদিন ধরে মানুষটাকে মিস করছেন। কিন্তু তিনি আপনাকে ডিউটির কারণে কোনভাবেই রেসপন্স করতে পারছে না। দিনশেষ ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরে ঘুম ঘুম চোখে আপনার সারাদিনের মিসিং এর রেসপন্স করল নামমাত্র অথবা করলোই না। এক্ষেত্রে ধৈর্যশীলা না হলে আপনার চোখের জলে বুড়িগঙ্গার কালা জল সাদা হয়ে যাবে তবুও বেচারার কিছুই করার থাকবেনা। কারণ, আগে ডিউটি, পরে প্রিয়তমা।
আপনাকে উদার এবং উদাস হতে হবে। যদি আপনি উদার না হন তবে আপনার পুলিশ প্রিয়তমকে জড়িয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখবেন তার বাস্তবায়ন না করতে পারলে অশান্তি শুরু করে দিবেন। আপনাকে কল্পনা করার আগেই ধরে নিতে হবে, ওইদিনে ওর ডিউটি থাকবে, আমাকে একাই যেতে হবে। আর উদাস হতে হবে যাতে উনার কর্মব্যস্ততার জন্য আপনার মন খারাপ হলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাশ্মীর, গোয়া, সমুদ্র বা পাহাড়ের সব দেশ ও কল্পনার রাজ্যে উনার হাত ধরে ঘুড়ে বেড়াতে পারেন।
আপনাকে তুমুল সাহসী হতে হবে। তা না হলে, উনি যখন হন্ত দন্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কোন অপারেশনে যেতে চাইবেন তখন আপনি ভয়ে কুঁকড়াবেন, আবেগে কান্নাকাটি করবেন। ওই সময়ে উনি আপনাকে সামলাবে নাকি ওয়ারলেসের ডাকে ছুটে যাবে? বরং তখন সাহসী হয়ে শক্ত গলায় বলতে হবে, বেখেয়ালি হইও না, সাবধানে সামলে নিও।
আপনাকে অল্পতে তুষ্ট হতে হবে। সব ব্যস্ততা ছাপিয়ে তিনি যে এক ঘণ্টা সময় আপনাকে দেবেন সেটাকে একদিন ভেবে তুমুল খুশি হতে হবে। স্বামী কেন্দ্রিক অসীম চাওয়ার সীমিত পাওয়া নিয়ে হাপিত্তাস করা যাবে না, রাগ দেখানো যাবে না। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, আপনি একজন ব্যতিক্রমী পেশাধারীর প্রিয়তমা। যিনি চাইলেও আবেগী হতে পারেন না, সময় বের করতে পারেন না।
উৎসব, ঈদ, পূজা, অনুষ্ঠান, শনিবার রবিবার আর পরিবার বলতে যার জীবনে কিছু নেই।
আপনাকে যৌক্তিক প্রতিবাদী হতে হবে। পুলিশের প্রিয়তমা হবার কারণে অনেকে অনেক টিপ্পনি কাটবে। পুলিশকে দেওয়া গালি সমান তালে আপনার কপালেও জুটবে। এক্ষেত্রে আপনাকে পুলিশের সততা এবং অন্যান্য পেশার অসততা মুখস্থ থাকতে হবে। যাতে টিপ্পনি কিংবা গালির বিনিময়ে তাদের মুখটা ফ্যাঁকাসে করে দেওয়া যায়।
বাহিরে যেতে পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হবার দক্ষতা থাকতে হবে। কখন উনি বিনা নোটিশে ঘন্টা খানেক সময় করে আপনাকে নিয়ে বের হতে চাইবে তার হদিস ফোন পাওয়ার আগে মিলবে না।তখন সাজতেই যদি লাগান আধাঘণ্টা তবে ঘুরবেন কখন? বাজার করবেন কখন? আর খাবেন কখনো?
এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যে ক্ষেত্রে আপনাকে অন্যান্য নারীদের থেকে একটু বেশি এগিয়ে থাকতে হবে। তবে এতে এটা ভাবার কারণ নেই, পুলিশ বিয়ে করা মানে লাইফটা হেল হয়ে যাওয়া। সমস্ত ব্যস্ততা ক্লান্তি মাথায় নিয়ে যখন মানুষটা বলবে “মিস ইউ সোনা, লাভ ইউ ডার্লিং;”
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী প্রিয়তমা আপনি নিজেকে তখন ভাবতে বাধ্য।
পুলিশেরাও ভালোবাসে, শুধু সেই ভালোবাসা প্রকাশের জন্য কোন আয়োজন করতে পারেনা সময়ের অভাবে। প্রিয়তমার প্রতি ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে তাদের ইউনিফর্মের ভাজে, অনুভূতি গুলো পুড়তে থাকে ঝলমলে রোদের আলোতে, আবেগগুলো ভিজতে থাকে বৃষ্টিতে।
ভালোবাসে.. তারাও তাদের প্রিয়তমাকে ভালোবাসে। মুখে না থাকলেও অনুভূতিতে ঠিকই থাকে তার প্রিয়তমা, চোখের লেন্সে ঠিকই থাকে তার প্রিয়তমার মুখ। ভালোবাসে… পুলিশও ভালোবাসে। আপনাকে শুধু মানুষটাকে বুঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। আর প্রাণের পুলিশটাকে ছাড় দিতে হবে।
তবে ছেড়ে দিতে পারবো না আমি
মাননীয়া ও সাহেবদের প্রতি আমাদের অনুরোধ ও আবেদন এই যে একবার পুলিশের পরিবারের লোকজনের কথা একবার ভাবুন। আজ বাড়ি থেকে ২০০/ ৪০০ কিলোমিটার দূরে পড়ে থাকা পুলিশদের অন্তত বাড়ি থেকে ৪০/ ৮০ কিলোমিটারের পোস্টিং দিন। আমাদের অন্য কিছু চায়না শুধু পরিবারের অভিভাবকের ও আমাদের ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে দিনের শেষে একবার দেখা করা ছাড়া। সত্যি বলুন তো পুলিশ কি দোষ করেছে? যার জন্য পিতা, মাতা, স্ত্রী ও সন্তান থেকেও নেই পুলিশের। উর্দিটাই শুধু জানে তাকে পরিহিত মানুষটার দুঃখের কথা, কষ্টের কথা। দয়া করে আর আমাদের চোখের জল আর যন্ত্রণার শিকার হতে দেবেন না। দেখবেন আপনি এইটুকু করলে অনেক বেশি ফল পাবেন ভবিষ্যতে। সবাই সবার পাশে থাকলেই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হবো নিশ্চয়ই।
আমাদের সমাজের মানুষেরাই তো পুলিশ, তারাও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। পারিবারিক, সামাজিক, সাংসারিক ও মানবিক পুলিশ হবার সুযোগ করে দিন। ক্ষমা করবেন আবেগী মনোভাব অকপটে বলে ফেললাম
#সংগৃহীতলেখাছবি লেখক অভিজিৎ মুখার্জি।